কমপিউটার হার্ডওয়ার Hardwares

কমপিউটার হার্ডওয়ার - একটি মাইক্রোকমপিউটার অনেক গুলো আলাদা আলাদা ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক যান্ত্রিক অংশ দ্বারা গঠিত। এই যন্ত্রগুলো সফটওয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এই গুলোর প্রত্যেকটিকে হার্ডওয়ার বলে। এর একটি অন্যটি থেকে সহজে পৃথক করা যায় এবং নতুন পার্টস দ্বারা পরিবর্তন করা যায়।







একটি কমপিউটার অনেকগুলি হার্ডওয়ারের সমষ্টি। উপরের ছবিতে নমুনা স্বরুপ কিছু হার্ডওয়ার দেখানো হলো-

কমপিউটার হার্ডওয়ারকে আবার দুই শ্রেনীতে ভাগ করা যায় :-
১) প্রাইমারী বা প্রাথমিক হার্ডওয়ার
২) সেকেন্ডারী বা সহযোগী হার্ডওয়ার ।
Primary বা প্রাথমিক হার্ডওয়ার
যে সমস্ত অল্প সংখ্যক হার্ডওয়ার ছাড়া কমপিউটার চলে না তাকে প্রাথমিক হার্ডওয়ার বলা হয়। যেমন-
• মাদার বোর্ড (Motherbard): মাইক্রোকমিপউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য সার্কিট ধারণ করে।
• মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor): ইহার কমিপউটারের কেন্দ্রীয় বা মূল অংশ। ইহা সমস্থ কমিপউটারকে মাদার বোর্ডের সাহায্যে নিয়ন্ত্রন করে।
• রাম (Random access memory) : সিপিইউ রামের মাধ্যমে উপাত্ত্ব সংগ্রহ , মজুদ এবং উদ্ধার করে।
• রম (Read only memory) - ইহাতে কমিপউটার চালু কালিন সময়ের প্রোগ্রাম ধারণ করে। ইহা ছাড়াও বিভিন্ন ইনপুট-আউটপুট ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রন করে।
• গ্রাফিক্স কার্ড (Display Card) - ইহা দ্বারা মনিটরকে কন্ট্রোল করে।

সহযোগী হার্ডওয়ার Secondary Hardwares
যে সমস্ত হার্ডওয়্যার মাইক্রোকমিপউটার সিষ্টেমের প্রধান অর্থাত প্রাইমারী ডিভাইস গুলিকে সহযোগীতা করে তাদেরকে সহযোগী ডিভাইস বলে। এদের অধিকাংশই কমিপউটারের কার্য্য ক্ষমতাকে বাড়ায় এবং এদের অধিকাংশ ছাড়াই কমিপউটার চালানো যায়। এগুলোকে কয়েক ভাবে ভাগ করা যায়ঃ-
(ক) ইনপুট ডিভাইস: যে সমস্ত হার্ডওয়ার বাহির থেকে সিপিইউ-তে তথ্য প্রবেশ করতে সাহায্য করে তাকে ইনপুট ডিভাইস বলে। যেমন কিবোর্ড, মাউস ইত্যাদি।
(খ) আউটপুট ডিভাইস: যে সমস্ত হার্ডওয়ার এর মাধ্যমে কমিপউটার তার কাজের ফলাফল প্রকাশ করে তাকে আউটপুট ডিভাউস বলে। যেমন মনিটর, প্রিন্টার ইত্যাদি।
(গ) স্টোরেজ ডিভাইস: এই সমস্থ হার্ডওয়্যারের দ্বারা কমিপউটার তথ্য সংরক্ষন করে। এগুলিতে তথ্য স্থায়ী ভাবে সংরক্ষিত হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলেও তথ্য নষ্ট হয় না।
(ঘ) বিদ্যুৎ সরবরাহ ইউনিট: ইহা এসি পাওয়ারকে ডিসি পাওয়ারে পরিবর্তন করে এবং কমিপউটারে বিভিন্ন অংশে পরিচালন করে।
ঙ) কেসিং বা চেসিস - যদিও হার্ডওয়ার নয় তবুও তা কমপিউটার সিস্টেমের একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ। কারন প্রাইমারী হার্ডওয়ারগুলি এর ভিতরে সংরক্ষন করা হয় এবং পেরিফেরালসগুলি এর সাথে সংযোগ দেওয়া হয়।

মাদারবোর্ড Motherboard
যাকে মেইনবোর্ড, সিস্টেম বোর্ড এবং ব্যাকপে¬ন বোর্ড ও বলা হয়) হচ্ছে পার্সোনাল কমপিউটারের হৃদপিন্ড। কারন ইহাই কমপিউটারের অধিকাংশ প্রসেসিং ক্ষমতা আধার। আসলে ইহাই পিসি - ইহা সিস্টেম রিসোর্স (যেমন - IRQ লাইন, DMA চ্যানেল , I/O লোকেশান) ; কোর কমপোনেন্টস (যথা - CPU , Chipset,Real time clock) এবং সিস্টেম মেমোরী (যথা -RAM, BIOS RAM, CMOS RAM) ইত্যাদি ধারন করে। ইহা একটি printed circuit board যা কমপিউটারের প্রয়োজনীয় প্রসেসিং অংশ গুলি ধারন করে। কমপিউটারের অংশগুলি পরস্পরের সংগে 'Interconnecting logic circuit ' দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
কাঠামোগত ভাবে ইহা তিন প্রকার –
• Active Backplane - অধিকাংশ মাদারবোর্ডই এই ধরনের। ইহাতে সমস্ত কমপোনেন্টগুলি বোর্ডের সংগে ফিস্কড করা থাকে বিধায় আপগ্রেড করা যায় না । শুধু সিপিইউ এবং রাম ছাড়া অন্য কিছু পরিবর্তন করা যায় না। দরকার হলে পুরা মাদারবোর্ডটিই পাল্টিয়ে ফেলতে হয়।
• Passive backplane - ইহাতে পরস্পর সংযুক্ত স্লট থাকে- কোন আই,সি ফিস্কড করা থাকে না। CPU , DRAM, BIOS, ROM এবং অন্যান্য সেন্ট্রাল প্রসেসিং কমপোনেন্ট গুলি আলাদা বোর্ডে সন্নিবেশিত থাকে যেগুলি ব্যাকপে¬নের স্লটে বসানো হয় - ফলে সহজেই ইহাকে আপগ্রেড করা যায়। পি,এস/২ টাইপ কমপিউটারে প্রথম এই ধরনের ব্যাকপে¬ন মাদারবোর্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর সমস্যা হলো বাস - এতে একটি মাত্র বাস স্টাইল ব্যবহার করা যায় (শুধুমাত্র আই,এস,এ বা এম,সি,এ বাস)।
• Modular - মাদারবোর্ডকে আরও আপগ্রেড ও সার্ভিস উপযোগী করার জন্য মডুলার মাদারবোর্ড তৈরীর চেষ্টা চলছে। ইহাতে CPU, Math-coprocessor, এবং অন্যান্য IC গুলিকে একটি পরিবর্তনযোগ্য বোর্ডে স্থাপন করা হয় যা মাদারবোর্ডে বসনো যায়। আর মাদারবোর্ডে RAM, BIOS RAM, CMOS RAM, অন্যান্য কন্ট্রেলার এবং বাস ইন্টারফেস গুলিকে ধারন করে। যদিও সহজেই ইহাকে আপগ্রেড করা যায় তথাপিও ইহা তেমন জনপ্রিয়তা পায় নাই।

এখানে একটি প্রামান্য মাদারবোর্ডের বিভিন্ন অংশের সচিত্র বর্ণনা দেওয়া হলো –


ইহা একটি AMD Socket AM2 Motherboard। এএমডির এথলন, অপটেরন, স্যামপ্রোন ও ফেনম প্রসেসর ব্যবহারের উপযোগী বোর্ড। ইহা PGA-ZIF বা পিন গ্রীড এরে টাইপের প্রসেসর সাপোর্ট করে। ইহার কন্টাক্ট এরিয়া ৯৪০ , ফ্রন্ট সাইড বাস ১০০০ মে.হা. এবং ডিডিআর-২ রাম সাপোর্ট করে।
১। ATX পাওয়ার সাপ্লাই কানেক্টর : ATX পাওয়ার সাপ্লাইকে মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত করে এবং পেরিফেরালস ডিভাইসের মতো মাদারবোর্ডের বিভিন্ন কম্পোনেন্টের কার্যকরী ফাংশনের জন্য -৫ ভোল্ট ডিসি থেকে +১২ ভোল্ট ডিসি পর্যন্ত পাওয়ার সরবারাহ করে। এই কানেক্টর ২০ পিন বিশিষ্ট ।
২। সকেট এ,এম-২: এটি প্রসেসর সকেট, যেখানে প্রসেসরকে সেট করা হয় এবং মাদারবোর্ডের অন্যান্য কম্পোনেন্টের সাথে প্রসেসরের সংযোগ ঘটানোর সুযোগ হয়।
৪। চিপসেট - Via nVidia nForce : এটি মাদারবোর্ডের বিভিন্ন কম্পোনেন্টের মাঝে ডাটা সরবরাহের ট্রাফিক সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে। ইহার দুইটি অংশ - নর্থব্রীজ (যা হিট সিংক দ্বারা আবৃত) ও সাউথব্রীজ।
৫। ডিম (DIMM) স্লট : ডুয়েল ইন-লাইন মেমরির মড্যুল (DIMM) স্লটটি ব্যবহৃত হয় মাদারবোর্ডে রাম বসানোর কাজে । ডিম স্লটটিতে ডিডিআর-২ RAM মেমরি মড্যুল ব্যবহার করা হয় ।
৬। ফ্লপি ড্রাইভ কানেক্টর : কালো বর্ণের এই কানেক্টরটি মূলতঃ ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভের জন্য ব্যবহৃত হয়। ফ্লপি ছাড়া অন্য কোন ডিভাইসে এই কানেক্টরে যুক্ত করা যায়না।
৭। সাটা আইডিই (IDE) কানেক্টর : সব ধরনের নতুন সাটা আইডিই ড্রাইভ যেমন, সিডি-রম, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ প্রভৃতি মাদারবোর্ডে যুক্ত করার জন্য এই কানেক্টর ব্যবহার করে।
৮। আইডিই (IDE) কানেক্টর : নীল রংয়ের এই স্লটটি সব ধরনের পুরাতন আইডিই ড্রাইভ যেমন, সিডি-রম, হার্ডডিস্ক ড্রাইভ প্রভৃতি মাদারবোর্ডে যুক্ত করার জন্য এই কানেক্টর ব্যবহার করে।

৯। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী : রিয়েল টাইম ক্লক (RTC) এবং বায়োস সেটিংস-এ নিয়ন্ত্রণের কাজে সিমোস (CMOS) রামে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী ব্যবহৃত হয়।
১০। বায়োস চিপ : এটি স্বল্প মাত্রার রম যা রেকর্ড নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাদারবোর্ডে সংযুক্ত সকল হার্ডওয়্যারকে কম্পিউটার বুটআপের সময় চেক করে দেখে।
১১। সিমোস রাম: একটি ভিন্ন মেমরি ব্লক যা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী কর্তৃক সরবরাহ কৃত পাওয়ার দ্বারা (কম্পিউটারের পাওয়ার যখন অফ অবস্থায় থাকে) সচল থাকে এবং রিয়েল টাইম ক্লক এবং বায়োস সেটিংসকে নিয়ন্ত্রণ করে।
১২। এজিপি বা পিসিআই এক্সপ্রেস স্লট: এক্সিলারেটেড গ্রাফিক্স পোর্ট হচ্ছে পিসিআই স্লটের এডভান্সড রূপ। যদিও এটিকে পোর্ট বলা হয়, বস্তুতঃ এটি একটি এক্সপানশন স্লট যা কম্পিউটারকে চমৎকার গ্রাফিক্স আউটপুট প্রদানে সহায়তা করে।
১৩। প্যারালাল পোর্ট : এধরনের পোর্ট সাধারণত বিশেষ ধরনের পেরিফেরালস , যেমন প্রিন্টার এবং স্ক্যানারকে যুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও একটি সিরিয়াল পোর্টের মাধ্যমে পিসি কিছু প্রিন্টারে ডাটা প্রেরণ করতে পারে। কিন্তু প্যারালাল পোর্ট সে তুলনায় অধিক ডাটা প্রিন্টারে প্রেরণে সক্ষম।
১৪। কম পোর্ট (COM1,COM2) : এটি কম্যুনিকশন পোর্ট হিসেবে পরিচিত। এক্সটার্নাল মডেম এবং মাউস প্রভৃতি সংযোগের জন্য সাধারণত কমপোর্ট ব্যবহৃত হয়।
১৫। ইউএসবি-২ (USB) কানেক্টর: ইউএসবি (ইউনিভার্সেল সিরিয়াল বাস) পোর্ট কমিউনিকেশনকে আরো অধিকতর গতিময় করে। পিসির সাথে কোন পেরিফেরাল যেমন স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা, মাউস, কী বোর্ড, জয়স্টিক প্রভৃতি যুক্ত করতে গেলে ড্রাইভার ইনস্টলেশন কনফিগারেশন এবং অন্যান্য যে সব ঝামেলা আগে পোহাতে হতো, ইউএসবি চিপসেটের কল্যাণে তা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তাছাড়া ইউএসবি পোর্ট মাল্টিপল হার্ডডিস্ক ড্রাইভ যুক্ত করার সুযোগ দেয়।
১৬। পিএস/২ (PS/2) কীবোর্ড এবং মাউস কানেক্টর: পিএস/২ ধরনের কানেক্টর কী-বোর্ড এবং মাউস সংযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। যদি কম্পিউটারে AT ধরনের কানেক্টর থাকে তবে এক্ষেত্রে AT-PS/2 ধরনের কনভার্টার দরকার হবে।
১৭। পিসিআই (PCI) স্লট: এক্সপানশন কার্ড যেমন NIC, Audio , SCSI এবং মডেম সংযোগের জন্য PCI (Peripheral Component Interconnect) স্লট ব্যবহৃত হয়।

Comments