কমপিউটারের শ্রেণীবিভাগ Types of Computers

আকৃতি, মূল্য, সংরক্ষণ ক্ষমতা, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কার্য সম্পাদন এবং ব্যবহারের সুবিধা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। আকৃতিগত ও ব্যবহারের ব্যাপকতার দিক থেকে কম্পিউটারকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভাগ গুলো হলো
• সুপার কম্পিউটার (Super Computer)
• মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)
• মিনি কম্পিউটার (Mini Computer)
• মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer)

সুপার কম্পিউটার (Super Computer)

আকৃতিগত দিক থেকে সর্ববৃহৎ এই কমিপউটারের তথ্য সংরক্ষণ ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী ও দ্রত গতি সম্পন্ন । বিপুল প্রক্রিয়াকরণের কাজে ব্যবহৃত অধিক ব্যয়বহূল এই কম্পিউটার সাধারণত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ - CRAY-1,CRAY X-MP,CYBER-205 । সম্প্রতি জেদ্দায় বাদশাহ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজীতে শাহীন নামের একটি সুপার কমপিউটার স্থাপন করা হয়েছে, যা উন্নত বিশ্বের বাহিরে সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কমপিউটার।

মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)


সুপার কম্পিউটারের চেয়ে ছোট কিন্তু অন্যান্য কম্পিউটারের চেয়ে বড় এ ধরনের কম্পিউটার একই সঙ্গে অনেকগুলি গ্রহণ মুখ/ নির্গমন মুখ এবং অনেক রকম সহায়ক স্মৃতির সাথে সংযোগ রক্ষা করে কাজ করতে পারে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ- UNIVAC 1100/01, IBM6120, IBM4341, NCR N8370, DATA GENERAL CS30 ইত্যাদি।

মিনি কম্পিউটার (Mini Computer)











মাঝারি ধরনের এ শ্রেণীর কম্পিউটারকে একটি সাধারণ টেবিলে বাসানো সম্ভব। এ শ্রেণীর কম্পিউটারের টার্মিনালের মাধ্যমে অনেক ব্যবহারকারী কাজ করতে পারে। এ ধরনের কম্পিউটারের কেন্দ্রিয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের জন্য সাধারণত একক বোর্ড বিশিষ্ট বর্তনী ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ - PDP11,NOVA3,IBM S/34,IBM S/36 ইত্যাদি।

সার্ভার
কার্য্য পরিধীর উপরে ভিত্তি করে কমপিউটারকে দুইভাবে ভাগ করা যায়। তার একটি হলো সার্ভার। ইহা একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কমপিউটার যার সাথে অনেকগুলি পিসি যুক্ত থাকে যাকে ওয়ার্ক ষ্টেশন বলে। ইহা সাধারনত একাধীক বিশেষ সিপিইউ দিয়ে তৈরী, যেমন ইন্টেল জিয়ন প্রসেসর।
মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer)
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ধরনের কম্পিউটারগুলো আকৃতিগত দিক হতে ছোট এবং দামেও খুব সস্তা। কেন্দীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের জন্য সাধারণত একক বোর্ড বিশিষ্ট বর্তনী ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ব্যাংকের হিসাব সংক্রান্ত কাজে এ শ্রেণীর কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ - IBM PC, APPLE iMac ইত্যাদি। মাইক্রোকম্পিউটার বা পার্সোনাল কম্পিউটারকে তিনটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়। যথাঃ-
(১) সুপার মাইক্রো (Super Micro)
(২) ডেস্কটপ (Desk Top)
(৩) ল্যাপটপ (Lap Top)
সুপার মাইক্রো (Super Micro)
সুপার মাইক্রো কম্পিউটার সবচেয়ে শক্তিশালী মাইক্রো কম্পিউটার। এর আরেক নাম ওয়ার্ক স্টেশন (Work station) । এ শ্রেণীর কম্পিউটারের ক্ষমতা মিনি কম্পিউটারের কাছাকাছি বিধায় এগুলো মিনিফ্রেমের স্থান দখল করে নিচ্ছে।

ডেস্কটপ (Desk Top)
এ শ্রেণীর কম্পিউটার সহজেই একটি ডেস্ক এর উপর রাখা যায় বলে এগুলো ডেস্কটপ কম্পিউটার বলা হয়। উদাহরণ - আইবিএম পার্সোনাল কম্পিউটার, এপল মেকিনটোশ ইত্যাদি।


ল্যাপটপ (Lap Top)
ডেস্কটপ কম্পিউটার অপেক্ষা ক্ষুদ্র কম্পিউটার গুলো ল্যাপটপ নামে পরিচিত। এগুলোর দেখতে ছোট এ্যাটাচি কেসের মতো ও বহনযোগ্য এবং কাজ করার সময় Lap বা কোল- এর উপর রেখে কাজ করা যায় বলে এগুলোকে বলা হয় ল্যাপটপ কম্পিউটার। ম্যাকিনটোশ পাওয়ার বুক (Macintosh Power Book) এ ধরনের কম্পিউটার। ল্যাপটপ কম্পিউটার গুলোকে আবার দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথাঃ-

নোট বুক (Note Book)
ছোট ডায়েরী বা নোটবুকের আকৃতির ল্যাপটপ কম্পিউটার গুলো এই নামে পরিচিত। এগুলোর পাওয়ার বুক ও বলা হয়।

পিডিএ (PDA=Personal Digital Assistsnce)

আইবিএম কমপাটিবল কমপিউটার IBM Compatible Computers
আই,বি,এম (IBM)
বর্তমানে প্রচলিত প্রায় সব মাইক্রো কমিপউটারই আই,বি,এম কমপাটিবল। যে সমস্ত মাইক্রোকমিপউটার আই,বি,এম প্যার্সনাল কমিপউটারের সমাঞ্জস্য তাকে আই,বি,এম কমপাটিবল কমিপউটার বলে। এখানে সমাঞ্জস্য বলতে আই,বি,এম কমিপউটারের অংশ সমূহ অর্থাৎ হার্ডওয়ার এবং সফটওয়ার (Hardware and Software) দুইই স্বাভাবিকভাবে অন্য যে কোন আই,বি,এম সমাঞ্জস্য কমিপউটারের প্রতিস্থাপনযোগ্য। সমস্ত আই,বি,এম কমপাটিবল কমিপউটারের মাইক্রো প্রসেসর ইনপুট আউটপুট ডিভাইস , সফটওয়ার ইত্যাদি একইরকম বৈশিষ্ট পূর্ণ ফলে একটি কমিপউটারের কোন অংশ অন্য কোন কমিপউটারে সমাঞ্জস্য পূর্ণ এবং ব্যবহার যোগ্য।

ব্রান্ড মেশিন (Brand Machine)
বিখ্যাত কমিপউটার কোমপানীগুলি নিজস্ব ফ্যাক্টরীতে যে কমিপউটার তৈরী করে বাজারজাত করে তাকে ব্রান্ড মেশিন বলে
ক্লোন মেশিন (Clone Machine)
বিভিন্ন কোমপানীর তৈরীকৃত পার্টস্‌ দিয়ে এসেম্বল করা কমিপউটারকে ক্লোন মেশিন বলে।

বিভিন্ন ধরনের আই,বি,এম কমপাটিবল কমিপউটার পাওয়া যায়। সেগুলো হল -
• IBM PC
• IBM PC/AT
• IBM PC/XT
• IBM PS/2.

IBM PC - ১৯৭১ সালে বাজারে আসে। এর বৈশিষ্ট নিম্নরূপ -
• ইনটেল ৮০৮৮ প্রসেসর সমৃদ্ধ,
• ১৬ কে,বি রাম - ৬৪ কে,বি র্বদ্ধিত করা যায়,
• ১ রং (মনোক্রম) ভি,ডি,ও (Video adapter),
• ফ্লপি ড্রাইভ (Floppy drive) - ১৬০ কে,বি ধারন ক্ষমতা সমপন্ন,
• হার্ডিডিস্ক নাই,

IBM PC/XT- ১৯৮৩ সালে ইহা বাজারে আসে ইহার বৈশিষ্ট নিম্নরূপঃ-
• ইনটেল ৮০৮৮ প্রসেসর
• রাম ৬৪ কে,বি পর্যন্ত বর্দ্ধিত করা যায়,
• হার্ডডিস্ক সাপোর্ট করে,

IBM PC/AT- ১৯৮৪ সালে বাজারে আসে। ইহার বৈশিষ্ট নিম্নরূপ -
• ইনটেল ৮০২৮৬ প্রসেসর সমৃদ্ধ,
• ইহার গতি PC/XT চেয়ে প্রায় ৭৫% বেশি,

AT Bus standard - এ,টি বাস ষ্ট্যান্ডার্ড অনেক ক্লোন মেশিনে ব্যবহার হয়। Bus standard মানে হল মাদার বোর্ডের সাথে বিভিন্ন ডিভাইসের সংযোগ স্থল এবং সংযোগ মাধ্যমের কারখানা স্ট্যান্ডার্ড। Clone - কমিপউটারের ভাষায় ইহার মানে হল সমাঞ্জস্য। উদাহরণতঃ AT Clone মানে হল IBM PC/AT সিরিজের সাথে সমাঞ্জস্য পূর্ণ।

IBM PS/2 : ইহা ১৯৮৭ সালে বাজারে আসে। ইহাতে বিভিন্ন ধরনের ইনটেল প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। ইহাতে MCA (Micro Channel Architecture) বাস স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয়।
আইবিএম নন-কমপাটিবল: -
অন্যদিকে এপেল কোম্পানীর তৈরী ম্যাকেন্টস কমপিউটারের হার্ডওযার বা সফটওয়ার কোনটাই আইবিএম কমপিউটারে প্রতিস্থাপন যোগ্য নয় বলে ইহাকে আইবিএম নন-কমপাটিবল বলে। এপেল (Apple) কোম্পানির Machintosh Computer কে আই বি এম নন কম্প্যাটিবল কমপিউটার।

এপেল ম্যাকেন্টস কমপিউটার
এপেল (Apple) কোম্পানির Machintosh Computer কে আই,বি,এম নন- কম্প্যাটিবল কমপিউটার। এপেল কোম্পানীর তৈরী ম্যাকেন্টস কমপিউটারের হার্ডওযার বা সফটওয়ার কোনটাই আইবিএম কমপিউটারে প্রতিস্থাপন যোগ্য নয় বলে ইহাকে আই,বি,এম নন-কমপাটিবল বলে।



পিসি বলতে বাংলাদেশে আমরা সাধারণত যা বুঝি তা হচেছ আই,বি,এম এর ক্লোন বা নকল। অথচ পার্সোনাল কম্পিউটারের জগতে এপেলই হচেছ দিক নির্দেশক। এপেল কম্পিউটারই পিসিকে ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তোলে। ইহা সর্বপ্রথম গ্রাফিক্স ইউজার ইন্টারফেস প্রবর্তন করে তাদের ম্যানেকটশ অপারেটিং সিস্টেমে। যা নকল করে অনেক বছর পরে মাইক্রোসফট তৈরী করে তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম । এমনকি ৩.৫ ইঞ্চি ফ্লপি ডিস্ক, সিডি রম ড্রাইভ এগুলোও সর্বপ্রথম এপেলই নিয়ে আসে তাদের কম্পিউটারে। পরে অন্যান্য কোম্পানী গুলোও এগুলো জুড়তে থাকে তাদের কম্পিউটারে।
বর্তমানে এপেল কোম্পানীর iMac নামক কম্পিউটার বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। ইহা একটি চমৎকার হোম অফিস কম্পিউটার। বর্তমানে বিশ্বে প্রচলতি হোম অফিস কম্পিউটার গুলোর মধ্যে এটা সেরা। প্রচন্ড শক্তিশালী অথচ ছোট এবং নজর কাড়া সৈর্ন্দয্য ও অদ্ভুদ ডিজাইন ইহাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও এর তুলনা হয় না।
Motorola কোম্পানীর তৈরী Power G3 প্রসেসর যুক্ত এ কম্পিউটার গুলো Intel Pentium বা AMD Athlon প্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটারের চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং নির্ভর যোগ্য। কম্পিউটার ব্যবহারকারীর আতংক কম্পিউটার ভাইরাস গুলো এর কোন ক্ষতিই করতে পারেনা। অর্থাৎ আপনাকে কখনও ভাইরাস আতংকে বিনিদ্র রাত কাটাতে হবেনা। এ ছাড়া ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় সব কিছুই আগে থেকে দেয়া (Built-in) আছে। এর কোন ক্লোন নেই , ফলে এর গুণমত মান অক্ষুন্ন থাকে। iMac তৈরী হয় এপেল কোম্পানীর নিজস্ব কারখানায়। ইহা যে কোন ব্র্যান্ডেড কম্পিউটার থেকে ও উন্নততর।
iMac এ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন পড়ে না বরং এর রয়েছে এপেলের নিজেস্ব Mac OS বা Macintosh Operating System| Mac OS নির্ভর iMac গুলো চালাতে শেখা বা এতে কাজ করা যে কোন উইন্ডোজ ভিত্তিক কম্পিউটারের তুলনায় অসম্ভব সহজ। তবে ইচ্ছে করলে iMac এও উইন্ডোজ এবং এর প্রোগ্রামগুলো চালানো যায়। মজার ব্যপার হচ্ছে এতে যে কোন পেন্টিয়াম ভিত্তিক কম্পিউটারের চেয়ে উইন্ডোজ ৩০% দ্রুতগতিতে কাজ করে। লেখা পড়া অফিসিয়াল কাজ কর্ম , অডিও সিডি বাজানো বা ভিডিও সিডি দেখার ব্যবস্থা, ইন্টার নেট, ই-মেইল সবই একেবারে হাতের কাছে। এমনকি ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মডেমটিও দেয়া আছে (Built-in) আগে থেকেই। সুতরাং iMac কে ফ্যাক্স মেশিন হিসেবেও ব্যবহার করতে পারছেন আপনি।

প্রতিটি iMac -G রয়েছে সর্বাধুনিক USB পোর্ট , যাতে এক সাথে আপনি ১২৭ টি পর্যন্ত পেরিফেরাল অর্থাৎ স্ক্যানার, ডিজিটাল ক্যামেরা, প্রিন্টার, ইত্যাদি সংযোগ দিতে পারেন। অথচ ক্লোন গুলোতে বিভিন্ন পেরিফেরাল লাগাতে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ইন্টারফেস। আবার এক সাথে ৩/৪-র বেশী পেরিফেরাল লাগানোও যায় না। এমন কি কীবোর্ড বা মাউস লাগাতে প্রয়োজন হয় আলাদা পোর্টের। অথচ iMac এ কীবোর্ড এবং মাউস লাগানো হয় ঐ USB ইন্টারফেসেই।

Comments